“প্রত্যেক শিশু মূলতঃ পৃথিবীর আলো—এবং একইসঙ্গে এর অন্ধকার, যার কারণে অবশ্যই শিক্ষার প্রশ্ন সব থেকে প্রধান গুরুত্ব হিসেবে গণ্য করা হবে।”


আবদুল-বাহা

শিশুদের একটি দল নিজেদের মধ্যে হাসি-ঠাট্টা করতে করতে পাড়ার ব্যস্ত রাস্তায় চলে এলো। রাস্তায় যেতে যেতে ওরা উজ্জ্বল হলুদ ফুলগুলি জঙ্গল থেকে তুলে নিলো, এরপর ফুলগুলি তারা একজন অল্পবয়সী মা-এর বাড়িতে নিয়ে এলো যিনি ওদের প্রত্যেক সপ্তাহে আধ্যাত্মিক গুণাবলী নিয়ে শিক্ষা দেন। শিক্ষককে উচ্ছ্বসিত হয়ে অভিবাদন জানাবার পর, ওরা একটা মাদুর ছড়িয়ে তার মাঝখানে ফুলগুলি দিয়ে সাজালো, তাড়াতাড়ি শান্ত হয়ে প্রার্থনার জন্য তৈরি হলো। ওরা একসঙ্গে সজোরে মুখস্থ করা কয়েকটি প্রার্থনা পাঠ করলো, এরপর শিক্ষক একটি নতুন প্রার্থনা সংযোজন করলেন। তারা একটি গান গাইলো এবং পবিত্র রচনাগুলি থেকে একটি উদ্ধৃতি নিয়ে আলোচনা করলো যা ছিলো বিশ্বস্ততা বিষয়ক। ওরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে একটি খেলায় অংশগ্রহণ করার পর ধ্যান মগ্ন অবস্থায় ফিরে এসে ওরা শেখা উদ্ধৃতির ওপর একটি ছবি রং করা শুরু করলো।

যদিও প্রথমদিকে ক্লাসের ছন্দে শিশুদের ফিরিয়ে আনতে শিক্ষককে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছিলো, কিন্তু ওদের সঠিক আচরণ শেখাতে চলে আসা কঠোর নিয়মানুবর্তিতার কোনও প্রয়োজন নেই বলে মনে করলেন। পরিবেশ ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং পরস্পরের প্রতি সম্মানে পরিব্যপ্ত রয়েছে, এবং শিশুদের একটি আধ্যাত্মিক জীবন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে। বাড়ি যাবার পর, ওরা বাড়ির সবার সঙ্গে ওদের ছবিগুলি দেখায় এবং শিক্ষক ওদের বাবা-মাকে রোজ সকাল এবং সন্ধ্যায় ওদের প্রার্থনা জানাবার অভ্যাস বজায় রাখার প্রতি এবং এমনকি বাড়িতে ভক্তিমূলক সভা করার জন্য উৎসাহ দেন।

এইরকম হাজার হাজার দৃশ্যসমূহ সারা ভারতজুড়ে প্রতি সপ্তাহে সামনে আসে যখন স্থানীয় যুবারা, পুরুষ এবং মহিলারা তাদের নিজেদের প্রতিবেশী অঞ্চলে বাড়িগুলি উন্মুক্ত করে এবং শিশুদের আধ্যাত্মিক গুণাবলীর উন্নয়নে ক্লাসের শিক্ষকদের ভূমিকা গ্রহণ করেন। ক্লাসগুলিতে, শুধু কোনটা “ঠিক” এবং “ভুল” জানা নয় বরং চরিত্রের আধ্যাত্মিক গুণাবলীর এবং বিশ্বাসগুলি, অভ্যাসগুলির ওপর জোর দেওয়া হয় যা একজন ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে। একটি সন্নিহিত অঞ্চলের অথবা গ্রামের জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশে সচেতনতার বিকাশ সাধনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে সমাজের সকল সদস্যগণ শিশুরা যা শিখছে, সকলে মিলে তা আরও বাড়াতে পারে।